এগো মা তব সম রুপ রঙ্গ কার

হাছন গীতিসমগ্র
এগো মা তব সম রুপ রঙ্গ কার ।
ঝিলিমিলি করে রুপে দেখি যে তোমার ।
বলা নাহি যায় তব রুপেরই বাহার ।।
সেই রুপে ঘর বানাইলো কলিজায় আমার ।
সব ছাড়িয়ে তব রুপ করিয়াছি সার ।।
রুপেতে মিশিবো তব কিছু চাইনা আর ।
এই মনে সাধ হইয়াছে হাছন রাজার ।
হাছন গীতিসমগ্র

আপনার আপনি যদি চেনা যায়

লালন গীতিসমগ্র
আপনার আপনি যদি চেনা যায় ।
তবে তারে চিনতে পারি সেই দয়াময় ।।
ওপরওয়ালা সদর বারি আত্মারুপে অবতারী ।
মনের ঘোরে চিনতে নারি কীসে কি হয় ।।
যে অঙ্গ সেই অংশকলা কায় বিশেষে ভিন্ন বলা ।
যার ঘুচেছে মনের ঘোলা সে কী তা কয় ।।
সেই আমি কি এই আমি তাই জানিলে যায় দুর্ণামী ।
লালন কয় তবে কি ভ্রমি ও ভবকুপায় ।।
লালন গীতিসমগ্র

কর পরশনে যেমন বেজে ওঠে তার

জালাল গীতিসমগ্র
কর পরশনে যেমন বেজে ওঠে তার
মম হৃদি যন্ত্র বাজে, তেমনি পরশে তোমার ।।
ছুটিছে মলয়, গাইছে কোকিল, স্থাবর জঙ্গম, অনল অনীল
একই তালে ধরিয়ে জ্বিল, আকাশ পাতাল পিছনে আর ।।
যে সুরে এই ভুবন ছাওয়া, সে রাগিণী হয়না গাওয়া
সার হয়েছে তরী বাওয়া, অকূলে না পেয়ে কিনার ।।
এক চাবিতে জন্মের মত, ঘুরছে ঘড়ির কাটা যত
গোপন থেকে চোরের মত, সদায় দিতেছে হে ঝঙ্কার ।।
কখন কাঁদি, আবার হাসি, যতই ডুবি ততই ভাসি
জানতে গেলেই গলায় ফাসি, এ তোমার ভুল নয় অবিচার ।।
ভেবে কয় জালাল উদ্দিন, এমন দিন গিয়েছে একদিন
আছো কি নাই ভাবতে গিয়ে, করতাম সোজা অস্বীকার ।।
জালাল গীতিসমগ্র

এশকো ছাড়া কোন চিজ পয়দা হইলো রে ভাই দুনিয়ায়

কালাশা গীতিসমগ্র
এশকো ছাড়া কোন চিজ পয়দা হইলো রে ভাই দুনিয়ায় ।
আশকী কি ধন নাই চিনে পরের গীবত সদায় গায় ।।
এশকো মোহাব্বাত নাহি যার, অসারের জিন্দেগী তার ।
পশুর মত কারবার, বিফলে জিন্দেগী যায় ।।
আলেম-ওলামা শত শত, ওয়াজ নসিহত করে কত ।
হইলোনা তার মন রত অজম্ভূতের মত হায় ।।
মজাজি আশিক জার, হইবে ভাই গ্রেপ্তার ।
এশকো সাদেক না হইলে জাহান্নামে যাবে হায় ।।
অধম কালাশায় বলে, জান শরীফ শার চরণ তলে ।
করিয়াছি ভরসা মনে, মুর্শীদ নি তরাইবায় ।।
কালাশা গীতিসমগ্র

কালারে মুই তোরে চিনলাম না

রাধারমণ গীতিসমগ্র
কালারে মুই তোরে চিনলাম না
তুই যে অনাথের বন্ধু তর অই যত কারখানা ।।
তুই কালা অনাথের বন্ধু পার কর ভবসিন্ধু
না বুঝিলাম এক বিন্দু তোর যত ছলনা ।
তুই কালায় করিলে ভক্তি পাপী তাপী পায় মুক্তি
তোর সনে করিলে চুক্তি শেষকালের ভয় থাকেনা
ভাবিয়া রাধারমণ বলে কোন পথে তোরে মিলে
কান্দি জনম গয়াইলে পাইনা তোর ঠিকানা ।
রাধারমণ গীতিসমগ্র

নবীজি নবীজি নবীজি

দুর্বিন গীতিসমগ্র
নবীজি নবীজি নবীজি
তব চরণ পরশে আঁধার ঘুচিলো মরুদেশে ।।
পাপী তাপীর দায়, জন্ম নিয়াছো মক্কায়
সাধিবারে কাজ, আপে গেলেন মেহেরাজ
শফিউল মুজনবীন, শফিউল মুজনবীন, বিশ্ব মুগ্ধ সুবাসে ।।
কত আশিকান, প্রেমে দিলো প্রাণ
পাইতে চরণ, করে কঠোর সাধন
ইয়া রাসুল, ইয়া রাসুল, ইয়া রাসুল, জপে হুশ বেহুশে ।।
নূরেরই সুরত, ফেরেস্তা খাসলত
করিলেন গুলজার, দুনিয়ার মাঝার
পয়গাম্বর পয়গাম্বর পয়গাম্বর তুমি সর্বশেষে ।।
নূরেরই পুতুল, আশিকে বুলবুল
যাইতে ফুলসেরাত, করিবেন শাফায়াত
দুর্বিন শা, দুর্বিন শা, দুর্বিন শা আছে চরণ আশে ।।
দুর্বিন গীতিসমগ্র

আমার সংসার নয়তো রে ভাই, ওটা একটা পান্থশালা

মনোমোহন গীতিসমগ্র
আমার সংসার নয়তো রে ভাই, ওটা একটা পান্থশালা
দিনেক দুদিন বিশ্রাম করে, অমনি আবার যেতে চলা ।
আমার মত কতই জনে, আমার আমার ভেবে মনে
অহঙ্কৃত ছিলো ধনে, পেতে ছিলো সাধের মেলা ।
তার আগে তার আগে কত, ছিলো আরো শত শত
চিনিনা সে জন্মের মত, ভেঙ্গে গেছে সুখের খেলা ।
হাসিটি ফুরাতে দেয়না, অমনি আবার ছুটে কান্না
কাজ নাই আমার এ ঘরকন্না, আর ভালো লাগেনা জ্বালা ।
মনো বলছে তাই ভাবিয়ে, চোখ মুদিয়ে দেখ চেয়ে
গরম ছেড়ে নরম হয়ে, পর হরিনামের মালা ।।
মনোমোহন গীতিসমগ্র

একদিন তোর হইবে মরণ রে হাছন রাজা

হাছন গীতিসমগ্র
একদিন তোর হইবে মরণ রে হাছন রাজা
একদিন তোর হইবে মরণ ।
মায়াজালে বেড়িয়া মরণ, না হইলো স্মরণ রে, হাছন রাজা ।
একদিন তোর হইবে মরণ ।।
যমের দূতে আসিয়া তোমায় হাতে দিবে দড়ি ।
টানিয়া টানিয়া লইয়া যাবে যমেরও পুরী রে ।।
সে সময় কোথায় রইবো তোমার সুন্দর সুন্দর স্ত্রী ।
কোথায় রইবো রামপাশা কোথায় লক্ষণছিরি রে ।।
করবায় নিরে হাছন রাজা রামপাশায় জমিদারী ।
করবায় নিরে কাপনা নদীর পাড়ে ঘুরাঘুরি রে ।।
আর যাইবায় নিরে হাছন রাজা, রাজাগঞ্জ দিয়া ।
করবায় নিরে হাছন রাজা দেখে দেখে বিয়া রে ।।
ছাড় ছাড় হাছন রাজা এ সবের আশা ।
প্রাণ বন্ধের চরণ তলে কর গিয়া বাসা রে ।।
গুরুর উপদেশ শুনিয়া হাছন রাজায় কয় ।
সব তেয়াগিলাম আমি দেও পদাশ্রয় রে ।।
হাছন রাজা একদিন তোর হইবে মরণ ।।
হাছন গীতিসমগ্র

আপন মনের গুণে সকলই হয়

লালন গীতিসমগ্র
আপন মনের গুণে সকলই হয় ।
পিড়েয় পায় পেড়োর খবর কেউ দূরে যায় ।।
মুসলমানের মক্কাতে মন হিন্দু করে কাশী ভ্রমণ ।
মনের মধ্যে অমূল্য ধন কে ঘুরে বেড়ায় ।।
রামদাস রামদাস বলে জাতে সে মুচির ছেলে ।
গঙ্গা মাকে হেরে নিলে চাম কেটোয়ায় ।।
জাতে সে জোলা কবীর উড়িষ্যায় তাহার জাহির ।
বারো জাত তারি হাড়ির তুড়ানি খায় ।।
কতজন ঘর ছেড়ে জঙ্গলে বাধে কুড়ে ।
লালন কয় রিপু ছেড়ে সে যাবে কোথায় ।।
লালন গীতিসমগ্র

চেনগা মানুষ ধরে

জালাল গীতিসমগ্র
চেনগা মানুষ ধরে
মানুষ দিয়া মানুষ বানাইয়া, সেই মানুষে খেলা করে ।।
কিসে দিব তার তুলনা, কায়া ভিন্ন প্রমাণ হয়না
পশুপক্ষি জীব আদি, যত এ সংসারে
দুইটি ভাণ্ডের পানি দিয়া, অষ্ট জিনিস গড়ে
তার ভিতরে নিজে গিয়ে, আত্ম রুপে বিরাজ করে ।।
মায়াসুতে জাল বুনিয়ে, প্রেমের ঘরে ভাব জাগায়ে
প্রাণেতে প্রাণ মিশাইয়ে, রহে জগৎ জুড়ে
নব রঙ্গে ফুল ফুটিলে, ভোমর আসে উড়ে
ফুলের মধু দেখতে সাদা, আপনি খেয়ে উদর ভরে ।।
সমুজ নিয়ে দেখো হয়ে, চলো ভেদ বিচারে
একটি পুরুষ নিজ ছুরতে, জগৎমাঝে ঘোরে
লক্ষ নারীর মন যুগাইয়া, প্রেমের মরা আপনি মরে ।।
জালাল গীতিসমগ্র